বি আর টি এ ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার নিয়ম ২০২৫
বি আর টি এ ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার নিয়ম
আমাদের জীবনের এক বিশেষ অংশ হলো ড্রাইভিং লাইসেন্স। এটি শুধুমাত্র একটি কাগজের টুকরো নয়, এটি আমাদের স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাস ও জীবনযাত্রার প্রতীক। তবে কখনও কখনও নানা কারণে আমাদের মনে প্রশ্ন আসে—আমার লাইসেন্স কি এখনও বৈধ? কি হয়েছে যদি হারিয়ে যায়। কিংবা কোনো সমস্যা হয়ে থাকে কি না। এইসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য এখন আর আমাদের কষ্ট করতে হয় না। আজকাল বি আর টি এ ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার সহজ ও আধুনিক পদ্ধতি আমাদের হাতের নাগালে এসেছে।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের চেক করার গুরুত্ব
আমাদের অনেকেই হয়তো জানেন না, যে কোন সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই করতে পারা, আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় বা ভুল তথ্য থাকে, তবে সেটা বড় ধরনের সমস্যায় পরিণত হতে পারে। তাই, অনলাইনে লাইসেন্স চেক করা একটি সহজ, দ্রুত এবং সঠিক পদ্ধতি হয়ে উঠেছে, যা আপনার সময় এবং মনঃসংযোগ বাঁচায়।
বি আর টি এ ওয়েবসাইটে প্রবেশ
আপনি যখন আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের অবস্থা জানতে চান, প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে বি আর টি এ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। ওয়েবসাইটটি খোলার পর, সেখানেই আপনি পাবেন লাইসেন্স চেক করার নির্দিষ্ট লিঙ্ক।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে কি কি কাগজ লাগে
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র --
- নির্ধারিত ফরমে আবেদন অনলাইনে আবেদন।
- আবেদনকারীর ছবি [ছবির সাইজ সর্বোচ্চ ১৫০ কেবি (৩০০ x ৩০০ পিক্সেল)]
- রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)। মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের ফর্মের জন্য এখানে ক্লিক করুন ]
- জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)
- ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি), [ আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা যদি ভিন্ন হয় তবে বর্তমান ঠিকানার ইউটিলিটি বিল সংযুক্ত করতে হবে ]
- বিদ্যমান ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্ক্যান কপি [ ড্রাইভিং লাইসেন্সের নবায়ন/শ্রেণী পরিবর্তন/শ্রেণী সংযোজন/ লাইসেন্সের ধরণ পরিবর্তণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ] (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)
- অনলাইনে আবেদন দাখিলের সময় ভুয়া তথ্য প্রদান করা হলে তার লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
- নির্ধারিত ফী, ১ ক্যাটাগরি-৫১৮/-টাকা ও ২ ক্যাটাগরি-৭৪৮/-টাকা অনলাইনে পরিশোধ।
লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় একটি নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফী প্রদান করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য সংশিস্নষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণপূর্বক স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে তা গ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়।
স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র --
- নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
- রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
- ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর সত্যায়িত ফটোকপি।
- নির্ধারিত ফী বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।
- সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
লাইসেন্স নম্বর ও তথ্য প্রদান
এখন, আপনার লাইসেন্স নম্বরটি মনে রাখুন এবং সঠিকভাবে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করান। এখানে আপনি আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের নম্বর, জন্ম তারিখ, এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে। যদি সব কিছু ঠিকভাবে দেওয়ার পরও ভুল তথ্য প্রদর্শিত হয়, তবে আপনাকে বি আর টি এ অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।
লাইসেন্স স্ট্যাটাস যাচাই করা
এখন, যেই মুহূর্তে আপনি সাবমিট বাটনে ক্লিক করবেন, সেখানেই আপনার লাইসেন্সের অবস্থা মূহূর্তে প্রকাশ পাবে। আপনি দেখতে পারবেন --
- আপনার লাইসেন্স কি এখনও বৈধ কিনা।
- তার মেয়াদ কবে শেষ হবে।
- যদি কোনো ট্রাফিক অপরাধ থাকে, তারও বিস্তারিত।
কোনো ভুল বা সমস্যা হলে কি করবেন?
যদি আপনি দেখে ফেলেন, আপনার লাইসেন্সের তথ্য সঠিক নয় বা সেখানে কোনো ত্রুটি আছে, তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আপনি খুব সহজেই বি আর টি এ অফিস এ যোগাযোগ করতে পারবেন এবং আপনার লাইসেন্সের তথ্য সংশোধন করতে পারবেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে একটি নতুন পদক্ষেপ
বর্তমান যুগে আমরা যে ডিজিটাল বিশ্বে বাস করি, সেখানে অনলাইন লাইসেন্স চেক আমাদের জন্য এক নতুন উপহার। এর মাধ্যমে, আপনি শুধু আপনার লাইসেন্সের অবস্থা জানতে পারবেন না, সাথে আপনি আপনার ড্রাইভিং সম্পর্কিত সকল তথ্য জানার সুযোগও পাবেন। এটি আমাদের সময়, শক্তি, এবং বিশেষ করে মানসিক শান্তি প্রদান করে।
লাইসেন্স যাচাই করা - একটি সচেতনতা
আমাদের পথচলা, আমাদের গাড়ি চালানো, কখনও কখনও শারীরিক অবস্থার থেকেও বেশি মনস্তাত্ত্বিক। যখন জানি যে আমাদের লাইসেন্স বৈধ, আমরা নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী থাকি। কিন্তু যখন জানা যায় যে আমাদের লাইসেন্সে কোনো সমস্যা থাকতে পারে, তখন মনে এক ধরনের অনিশ্চয়তা আসে। তাই, নিয়মিতভাবে বি আর টি এ লাইসেন্স চেক করা আমাদের জন্য এক ধরনের সচেতনতা এবং দায়িত্বশীলতা।
নিরাপদ ও সঠিকভাবে চলতে, লাইসেন্স চেক করুন
আপনি যদি মনে করেন, আপনার লাইসেন্সের অবস্থা পরিষ্কার না, তাহলে বি আর টি এ লাইসেন্স চেক করে দেখুন। কখনও কখনও, তা আপনার নিরাপত্তা এবং আইনি নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করা একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ যা আপনাকে আপনার দায়িত্বের প্রতি সচেতন করে তোলে।
লাইসেন্স চেক করার নিয়ম সহজ, তবে দায়িত্বও বড়
আমরা সবাই জানি যে, লাইসেন্স একটি আইনি অনুমতি। তাই এটি শুধুমাত্র কাগজের টুকরো নয়, আমাদের দায়িত্বের একটি প্রতীক। একে সঠিকভাবে যাচাই করাটা আমাদের ভবিষ্যত নিরাপত্তা এবং সঠিক পথে চলার একমাত্র উপায়।
18 বছরের আগে কি ড্রাইভিং লাইসেন্স করা যায়?
বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। ১৮ বছরের নিচে কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারে না। এটি সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী নির্ধারিত। তবে, ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে যারা মোটরসাইকেল চালাতে চায়, তারা একটি লার্নার পারমিট (Learner's Permit) পেতে পারে। এই পারমিটের মাধ্যমে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে চালানো যাবে, তবে পুরোপুরি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক।
ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য কেন ১৮ বছর হতে হবে?
- পরিপক্বতা -- ড্রাইভিং একটি দায়িত্বশীল কাজ এবং এটির জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ পরিপক্বতা প্রয়োজন। ১৮ বছর বয়সে সাধারণত একজন ব্যক্তি মানসিক ও শারীরিকভাবে আরো পরিপক্ব হয়ে ওঠে।
- সুরক্ষা -- সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই এই নিয়ম। অপরিণত ড্রাইভারদের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
- আন্তর্জাতিক মান -- অনেক দেশেই অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স --
- পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ন্যূনতম বয়স ২১ বছর।
- যদি আপনি ট্যাক্সি, বাস ইত্যাদি চালাতে চান, তাহলে আপনাকে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে।
বিস্তারিত জানতে --
আপনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর ওয়েবসাইট বা স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করে আরও বিস্তারিত তথ্য পেতে পারেন।
মনে রাখবেন --
- নিরাপদ ড্রাইভিং করুন।
- সবসময় ট্রাফিক আইন মেনে চলুন।
- ড্রাইভিং লাইসেন্স নেওয়ার আগে ভালো করে ড্রাইভিং শিখুন।
আশা করি এই তথ্য আপনার জন্য উপকারী হবে।
আপনার লাইসেন্স, আপনার নিরাপত্তা
আজকের এই সহজ ও সঠিক পদ্ধতি আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বি আর টি এ ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার মাধ্যমে, আপনি নিজের লাইসেন্সের অবস্থা জানতে পারবেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন এবং সঠিক পথে চলার জন্য আরো দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে পারবেন।আপনার লাইসেন্স চেক করুন, সঠিক থাকুন, এবং নিরাপদে চলুন—কারণ নিরাপত্তা শুরু হয় আপনার নিজের হাত থেকে।
শেষ কথাঃ বি আর টি এ ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার নিয়ম
এতক্ষণ যাবত আপনাদের সাথে অনলাইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে ডাইভিং লাইসেন্স চেক করার নিয়ম জানতে পারবেনড্রাইভিং লাইসেন্স করতে কি কি কাগজ লাগে ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারবেন। আরও এমন তথ্য জানতে ওয়েবসাইটটি ঘুরে দেখতে পারেন।
এসএস রাইফেল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url