শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় ২০২৫
শরীরের ফিটনেস ধরে রাখার সহজ উপায় ২০২৫প্রিয় পাঠক, এসএস রাইফেল আইটিতে আপনাকে স্বাগতম। আপনি হয়তো ত্বক নিয়ে ভাবছেন? ত্বকের যত্ন কিভাবে করবেন এবং শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। কিন্তু সঠিক তথ্যটি খুজে পাচ্ছেন না। আজকে আমরা শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এছাড়াও আরো আলোচনা করবো ঠোঁট ফাটা এবং পা ফাটা সমস্যার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।
নিচের এই আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করেছি শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়, ঠোঁট ফাটা এবং পা ফাটা সমস্যার কারণ ও প্রতিকার, শীতে ত্বকের যত্নে বিভিন্ন ধরনের খাবার সম্পর্কিত সঠিক তথ্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার। এছাড়াও এর সাথে সম্পর্কিত বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি যেগুলো আপনার অনেক উপকারে আসবে। তাহলে এবার চলুন সেই সকল বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
ভূমিকা -- শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
প্রিয় পাঠক, শীতে ত্বকের শুষ্কতা বেড়ে যায়। তাই দেখা দেয় নানা রকমের ত্বকের সমস্যা। যেমন- হাত পা ফাটা, ঠোঁট ফাটা, মুখের চামড়া উঠে যাওয়া। এখন চলছে শীতের মৌসুম। শীতের হিম হিম ঠান্ডা হাওয়ায় তক হয়ে ওঠে শুষ্ক, রুক্ষ এবং টানটান।
আরো পড়ুনঃ আর্টিকেলে স্ক্রিনশট যুক্ত করার নিয়ম
শীতের দাপুটে বাতাসে ধুলাবালি, সর্দি, কাশি এবং শীতের পোশাকে টালমাটাল সময়ে এবং ব্যস্ত জীবনের নানান কারণে ত্বকের দিকে আমাদের খুব একটা খেয়াল রাখা হয় না। কিন্তু আমরা যদি সঠিকভাবে ত্বকের পরিচর্যা করি সেক্ষেত্রে আমাদের ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জল, মসৃণ এবং আরো সুন্দর ও কোমল। তাই শীতে ত্বকের যত্নে নিচের টিপস গুলো ফলো করুন।
ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে পানি পান করা
শীতকালে অনেকেই কম পরিমাণে পানি পান করে। এটি ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনে। ত্বকের জন্য আপনাকে শুষ্ক আবহাওয়ায় বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে। শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে একদিকে যেমন বিভিন্ন চর্ম রোগের জন্ম দেয় তেমনি ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। অন্যদিকে পানির অভাবে নানা রকম শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। অনেকেই আছেন পানি ঠান্ডা হওয়ার কারণে পান করতে চান না। এর জন্য আপনি পানি হালকা কুসুম গরম করে পান করতে পারেন।
শীতে ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার
শীতের শুরুতে ত্বকের যত্নে ভালো ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। এমন ময়েশ্চারাইজার বাছাই করতে হবে যাতে তেলের পরিমাণ বেশি থাকে। বাদাম তেল বা অ্যাভোকাডো সম্মিলিত মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। যতবার ত্বক শুষ্ক মনে হয় ততবারই ব্যবহার করতে পারবেন।
শীতকালে ঠোট ও পায়ের প্রতি যত্নশীল হওয়া
শীতে ঠোঁট ও পা ফাটার অন্যতম কারণ হলো শুষ্ক আবহাওয়া। শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ধুলাবালি বেশি থাকে। যার কারনে শরীরে ময়লা জমে ত্বক হয়ে যায় রুক্ষ শুষ্ক। ত্বক ফাটার আরো কিছু কারণ আছে যেমন - গরম পানিও খাওয়া চা কিংবা কফি, জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানো, হরমোন জড়িত সমস্যা, ইউভি রশ্মি ও ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন বি-২, ফ্যাটি এসিড জিংক ইত্যাদির অভাব।
শীতে ঠোঁট ফাটা সমস্যায় যা করবেন
শীতের সময় পানি পান করতে অধিকাংশ মানুষই অলসতা বোধ করে থাকেন। আমার পানি ঠান্ডা থাকায় অনেকেই পানি পান করতে চান না। এ কারণে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। আর তখন পানি শূন্যতার কারণে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করার চেষ্টা করুন। শীতে ঠোঁট ভালো রাখতে লিপস্টিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এগুলো ঠোঁটকে অনেক বেশি শুষ্ক করে তোলে। ঠোটের চামড়া উঠানো থেকে বিরত থাকুন। জিভ দিয়ে বার বার ঠোঁট ভেজাবেন না।
কিছুক্ষণ পর পর লিভ জেল ব্যবহার করতে পারেন। ঠোঁটের ত্বক কোমল ও গোলাপি রাখতে চাইলে ৩ থেকে ৪ চামচ আমন্ড অয়েল, ২ চামচ মধু, ১ চামচ এলোভেরা জেল একসঙ্গে মিশিয়ে একটি কোটাতে সংগ্রহ করুন। এবার তুলোতে এক ফোঁটা গ্লিসারিন ও ২ থেকে ৩ পানি দিয়ে ঠোঁটে হালকা করে ঘোষুন।দুই থেকে তিন মিনিট ঘষার পরে ভেজা কাপড় দিয়ে ঠোঁট মুছে ফেলুন। এরপর কোটাতে সংগ্রহ করা মিশ্রণটি লাগান। এই মিশ্রণটি একবার বানিয়ে পুরো শীত জুড়ে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহার করলে আপনার ঠোট থাকবে উজ্জ্বল, নরম এবং গোলাপি।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে পাকা কলা ও মধুর মিশ্রণ
প্রথমে একটি পাকা কলা পেস্ট করে তাতে মধু মেশাতে হবে। এবার এই মিশ্রণটি মুখে, গলায় ও হাতের ত্বকে লাগাতে হবে। শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ত্বকে আদ্রতা বেড়ে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে গোলাপজল ও গ্লিসারিনের ব্যবহার
শীতে ত্বকের সুরক্ষায় গোলাপ জল ও গ্লিসারিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গ্লিসারিন ব্যবহারের ফলে যে কোন ত্বক হয়ে ওঠে কোমল ও প্রাণবন্ত। গ্লিসারিন সরাসরি ব্যবহার করতে যারা পছন্দ করেন না, তারা গ্লিসারিনের সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারে। একই ভাবে গোলাপ জল ব্যবহার করা যায়। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে ত্বক হবে সুন্দর ও আকর্ষণীয়।
শীতে পা ফাটা সমস্যায় যা করবেন
আমাদের দেহের অন্যান্য অংশে তৈল গ্রন্থি রয়েছে। কিন্তু পায়ের তালুতে কোন তৈল গ্রন্থি নেই। আছে শুধু ধর্মগ্রন্থি। শীতে ঘাম না না হওয়ায় পায়ের তলায় আদ্রতা নষ্ট হয়। যার ফলে পাওয়া অনেক বেশী শুষ্ক হয়ে যায়। এ কারণে সচরাচর শীতে আমাদের পা ফেটে যায়।
পা ফাটা সমস্যাতেও আপনি পরিমাণ মতো পানি পান করতে পারেন এবং বেশি ঠান্ডা আবহাওয়ায় পায়ের মোজা পরিধান করতে পারেন। গোসলের পর পায়ে অলিভ অয়েল তেল ম্যাসাজ করুন। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পায়ে গ্লিসারিন মালিশ করুন এবং এরপর মোজা পরুন।
তাহলে পা দ্রুত গরম হবে এবং পা সপ্তাহখানেক পর থেকে কমতে শুরু করবে। যাদের পা ফাটা অনেক বেশি তারা গরম পানিতে ১৫ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখুন৷ এরপর শুকনো কাপড় দিয়ে ভালোভাবে পা মুছে নিন। এরপর এক চামচ লেবুর রস, তিন থেকে চার ফোটা গ্লিসারিন ও পরিমাণ মত ভেসলিন একসাথে মিশিয়ে মিশ্রণটি ভালোভাবে পায়ে লাগান।
দ্রুত ফলাফল পেতে প্রতিরাতে ব্যবহার করুন। এটি পা ফাটা রোধ করার জন্য একটি কার্যকরী উপাদান। যাদের পা অনেক বেশি ফেটে গেছে এবং মেঝেতে পা রাখলে অনেক ব্যথা অনুভব করেন বা রক্ত বের হয় তারা অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শীতে ত্বকের যত্নে যা খাবেন
ঋতুর পরিবর্তনের ফলে শীত আসে। এই সময়ে ত্বক এবং শরীরের যত্নে খাবার-দাবারের প্রতি বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী খাবার না খেলে শরীর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর কারণ হলো শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
আরো পড়ুনঃ ঘাড় ব্যথা থেকে মুক্তির উপায়
এ সময় খাবার খাওয়ার নিয়ম ঠিকঠাক মেনে না চললে একদিকে যেমন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় ঠিক তেমনি ত্বকের উজ্জলতাও নষ্ট হয়ে যায়। সেজন্য ঋতুর সাথে তাল মিলিয়ে নজর দিন ডায়েটে। শীতের শুরু এবং শেষের সময় ডিহাইড্রেশন এর সমস্যা দেখা দেয়। এর কারণ হলো ঠান্ডা আবহাওয়া জনিত কারণে পানি পানের প্রবণতা কমে যায়। তাই এই সময়ে বেশি পানি পান প্রয়োজন। এর জন্য আপনি হালকা কুসুম গরম পানি পান করতে পারেন। মাঝে মাঝে ডাবের পানি ফলের রসও পান করতে পারেন।
সারাদিনে তিন বেলার খাবারের মেনুতে রাখতে পারেন বিভিন্ন ধরনের স্যুপ, গরম দুধ, দুধ ছাড়া চা, ৩-৪ ফোটা লেবুর রস এটি পানির সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টেরও কাজ করবে। শীতের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। মৌসুমী ফল যেমন কমলালেবু, আপেল, মালটা ইত্যাদি নানা ধরনের শীতের ফল ও শাকসবজি যথেষ্ট পরিমাণে খান। এগুলোর মধ্যে উপস্থিত ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের সজীবতা বজায় রাখে এবং খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে।
টাটকা ফল ও সবজিতে রয়েছে বায়োটিক যা ত্বক ও চুল ভালো রাখে। তাই তাজা সবজি ও ফল খাওয়া জরুরি। প্রসেসড বা ফ্রোজেন ফুড এর বদলে ন্যাচারাল ফুড খাওয়ার চেষ্টা করুন। শীতে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য প্রয়োজন ফ্যাটি অ্যাসিড। বাদাম, মাছ এই ধরনের খাবার বেশি করে খান। শীতকালের নানা ধরনের ফল ও সবজি দিয়ে সালাদ তৈরি করে খান। প্রোটিন জাতীয় খাবার শরীরের তাপমাত্রা বজায় রেখে শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে। শীতের সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠান থাকে এবং প্রচুর খাওয়াও হয়।
তাই শরীরের ক্যালরি ও বেড়ে যায়। শীতে দুধ দিয়ে তৈরি চা ও কফি না খেয়ে গ্রিন টি খেতে পারেন। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। এই ধরনের খাবারের বদলে চাইলে সালাদ খান। চাইলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন কারণ এতে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ কম থাকে যা হার্টের জন্য ভালো। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে ভাত এবং রুটি কম খান। প্রচুর পরিমাণে পানিয় ফল দিয়ে সালাদ বানিয়ে খান।
শেষ কথাঃ শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়
প্রিয় পাঠক, আপনি ওপরের আর্টিকেলের শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কিত অনেক তথ্যই জানতে পারলেন। তাই আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনি উপকৃত হবেন এবং এর মাধ্যমে আপনার প্রিয়জনদের উপকৃত হতে সাহায্য করবেন।
আমাদের এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে কিংবা আপনার কোন উপকারে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু, প্রিয়জন বা পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করবেন। আর্টিকেলটি পড়ে তারাও উপকৃত হতে পারে। আপনার যদি আরোও কিছু জানার ইচ্ছে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাতে পারেন। আমরা চেষ্ট করবো সেগুলোর উত্তর দেওয়ার। আজ এই পর্যন্তই। সব সময় সুস্থ্য থাকবেন এবং ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
এসএস রাইফেল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url